Role of Constituent Assembly
What was the Role of Constituent Assembly? WBCHSE class eleven Political Science notes in Bengali. Chapter- Constitution. Question- What Was the Role of Constituent Assembly in framing the Constitution of India? Rastrabigyan Prashna Uttar.
একাদশ শ্রেণি
রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর
অধ্যায়- সংবিধান
প্রশ্ন- ভারতীয় সংবিধান রচনায় গণপরিষদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে। 8 (উঃ মাঃ 2016, 2019)
উত্তর- ভারতের সংবিধান হল বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। এই সংবিধান রচনা করেছিল গণপরিষদ নামক একটি সাংবিধানিক পরিষদ। উল্লেখ্য যে, 1946 সালে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুসারে এই গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 389 যার মধ্যে ব্রিটিশ শাসিত প্ৰদেশসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধি সংখ্যা ছিল 296 এবং দেশীয় রাজ্যসমূহের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন 93 জন। যাইহোক, গণপরিষদে কংগ্রেস দলের একক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 1946 সালের 9ই ডিসেম্বর নতুন দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে, শুরু হয় ভারতের সংবিধান রচনার কাজ।
ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা
স্বাধীন ভারতের জন্য নিজস্ব একটি সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে গণপরিষদ গঠিত হয়েছিল। সুতরাং ভারতের সংবিধান রচনায় একমাত্র কৃতিত্বের অধিকারী হল গণপরিষদ, এবিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু তা সত্বেও ভারতের সংবিধান রচনায় গণপরিষদের ভূমিকা বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে।
আসলে, গণপরিষদ যখন ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে তখন ভারতকে দারিদ্র, সামাজিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো অনেকগুলি জ্বলন্ত সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছিল।
আবার, ততদিনে বিশ্বের বহু রাষ্ট্রই তাদের নিজস্ব সংবিধান পেয়ে গেছে। অর্থাৎ, সংবিধান প্রণেতাদের কাছে তখন অনেকগুলি বিকল্প ছিল- বিভিন্ন দেশের সংবিধান থেকে বিভিন্ন বিষয় ঋণ হিসেবে নেওয়ার সুযোগ ছিল। সংবিধান রচয়িতাগণ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলেন, একথা বলাই বাহুল্য।
তাছাড়া, ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে ভারতকে শাসন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে যেসব ভারত শাসন আইন (Govt of India Act) প্রণীত হয়েছিল, সেগুলি থেকেও কিছু মৌলিক জিনিস ভারতের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল এবং সংবিধান প্রণেতাগণ তা করেওছিলেন। এইজন্য ভারতের সংবিধানে ব্রিটিশ উত্তরাধিকারের প্রভাব বিশেষভাবে চোখে পড়ে।
উপরের আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, গণপরিষদের উদ্দেশ্য ছিল নবগঠিত ভারত রাষ্ট্রের জন্য এমন একটি সংবিধানের রূপরেখা তৈরি করা যা ভারতের তৎকালীন সমস্যাগুলির সুরাহা করতে পারবে এবং ভারতের নাগরিকদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলি সুনিশ্চিত করবে। যাইহোক, গণপরিষদ দীর্ঘ সময় (দু'বছর এগারো মাস আঠারো দিন) ব্যয় করে ভারতের জন্য যে সংবিধান রচনা করেছিল সেই সংবিধান কতখানি উদ্দেশ্য পূরণ করেছিল, সেটাই এখানে বিবেচ্য।
1) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা- গণতন্ত্র হল এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে সমস্ত ক্ষমতার উৎস হল জনগণ। ভারতের সংবিধানের প্রস্তবনাতেই ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংবিধানে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হিসাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
2) নাগরিকদের সর্বাঙ্গীন বিকাশের ব্যবস্থা- ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য সাত প্রকার মৌলিক অধিকার প্রদান করা হয়েছিল। সেগুলি হল- সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার। বর্তমানে অবশ্য সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
3) সামাজিক বৈষম্য নিরসনের ব্যবস্থা- বৈষম্য দূর করতে হলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ভারতের সংবিধানের 14 থেকে 18 নম্বর ধারায় সাম্যের অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
4) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা- প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে বহু ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। ভারতের এই ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখাটা গণপরিষদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল সেই রাষ্ট্র যা কোনো ধর্মকে জাতীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করবে না, আবার তা ধর্মহীনও হবে না, যে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেবে না বরং সকল ধর্মকে সমান সুযোগ সুবিধা দেবে। ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। ভারতের প্রতিটি নাগরিক নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মাচরণ করতে পারেন।
5) দারিদ্র দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ- ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সংবিধানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকায় রেখে সামাজিক বৈষম্যের ভিত্তি মজবুত করা হয়েছিল। তবে, 44 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাতিল করা হয়। যাইহোক, গণপরিষদ ভারতের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি বিধান করতে পারেনি।
পরিশেষে বলা যায়, গণপরিষদের প্রধান ভূমিকা ছিল স্বাধীন ভারতের জন্য একটি নিজস্ব সংবিধান রচনা করা এবং সেই কাজে গণপরিষদ সম্পুর্ণ সফল হয়েছিল, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।