Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

Nature_of_Indian_Federalism

Nature of Indian Federalism


Is India a federal country? Or, is it unitary? WBCHSE class 11 political science question and answer in Bengali for test exam and Annual Examination. Chapter- Forms of Government. Question- Nature of Indian Federalism.

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (একাদশ শ্রেণি)

অধ্যায়- সরকারের বিভিন্ন রূপ


প্রশ্ন- তুমি কি মনে কর যে, ভারতের সংবিধান গঠনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয়, কিন্তু কার্যত এককেন্দ্রিক। তােমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও। (8)


অথবা, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃতি আলােচনা করাে। (8)



উত্তর- ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। ক্ষমতা বন্টনের নীতির ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা এককেন্দ্রিক অথবা যুক্তরাষ্ট্রীয় হতে পারে। কিন্তু ভারতের শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। অনেকের মতে ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্র, আবার অনেকেই ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলার পক্ষপাতী নন। নীচে ভারতীয় শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তিগুলি তুলে ধরা হল।

ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলার কারণসমূহ


ভারতের সংবিধানে কোথাও ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্র বলে উল্লেখ করা হয়নি। সংবিধানের 1(1) ধারা অনুসারে, ভারত হল 'অঙ্গরাজ্যসমূহের সংঘ' [India, that is Bharat, shall be a union of States]। যুক্তরাষ্ট্র বলে উল্লেখ না করা হলেও ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেগুলি হল-

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দু'ধরণের সরকারের উপস্থিতি- এক, কেন্দ্রীয় সরকার এবং দুই, আঞ্চলিক সরকার। ভারতে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি অঙ্গরাজ্যগুলির পৃথক সরকার রয়েছে। এই অঙ্গরাজ্যগুলির সম্মিলিত অবস্থাই হল ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রে সাংবিধানিক উপায়ে কেন্দ্র এবং আঞ্চলিক সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করা হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ভারতের সংবিধানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতার তালিকা করে দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধানের প্রাধান্য বিশেষভাবে স্বীকৃত। ভারতীয় সংবিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি সংবিধান অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করে। একইসঙ্গে, সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয় এবং সংবিধানবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যায় না।

চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্রের উপযোগী সংবিধান হল লিখিত এবং দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। ভারতের সংবিধান হল বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান এবং সংশোধন পদ্ধতির দিক থেকে এটি অংশত দুষ্পরিবর্তনীয়। 

পঞ্চমত, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হল একটি নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের অথবা দুই বা তার বেশি রাজ্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্ট তার নিষ্পত্তি করে।

ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র না বলার কারণসমূহ


অনেকের মতে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্র বলার পক্ষে যথেষ্ট নয়। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র না বলার পিছনে যুক্তিগুলি হল-

প্রথমত, ভারতের সংবিধান অংশত দুষ্পরিবর্তনীয়, কিন্তু বেশির ভাগটাই সুপরিবর্তনীয়। সংবিধান সংশোধনের যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে তৃতীয়টি কেবল জটিল পদ্ধতি, বাকি দুটি পদ্ধতিতে সহজেই সংবিধান সংশোধন করা যায়। এইজন্য সংবিধান কার্যকর হওয়ার 70 বছরের মধ্যে ভারতের সংবিধান 100 বারেরও বেশি সংশোধিত হয়েছে। সংবিধানের এই সুপরিবর্তনীয়তা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে মানানসই নয়।

দ্বিতীয়ত, ভারতে সংবিধানের প্রাধান্যও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ভারতে সংবিধানবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যায় না, একথা সত্য। কিন্তু এটাও সত্য যে, পার্লামেন্টের হাতে সংবিধান সংশোধনের যে ক্ষমতা রয়েছে তাতে সংবিধানের মূল কাঠামো ছাড়া সংবিধানের যেকোনো অংশ সংশোধন করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, আইন প্রণয়নের ব্যাপারেও কেন্দ্র সরকার রাজ্যগুলির থেকে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। ভারতের সংবিধানে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি তিনটি তালিকায় বিভক্ত হয়েছে- 1) কেন্দ্রীয় তালিকা, 2) রাজ্য তালিকা এবং 3) যুগ্ম তালিকা। কেন্দ্র সরকার [ক] কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে, [খ] বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে, [গ] যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে এবং রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধ দেখা দিলে কেন্দ্রীয় আইনটিই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং [ঘ] উক্ত তিন তালিকার বাইরে কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হলে কেন্দ্র সরকার সেই আইন প্রণয়ন করতে পারে।

চতুর্থত, রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত বিষয়েও কেন্দ্রের আধিপত্য লক্ষ্য করার মতো। বাস্তবে ভারতের রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে শাসনকার্য সম্পাদন করতে হয়। রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসাবে নিযুক্ত রাজ্যপাল আসলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করেন। রাজ্যপাল তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেকোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করতে পারেন।

পঞ্চমত, আর্থিক বিষয়েও কেন্দ্রের প্রাধান্য রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য তালিকার বাইরে থাকা বিষয়গুলির রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা কেন্দ্রের রয়েছে। আবার, অর্থ কমিশন গঠন করার ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে রয়েছে। তাছাড়া, রাজ্যগুলির আয়ব্যয়ের হিসেব পরীক্ষা করেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল এবং কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল যারা রাষ্ট্রপতি দ্বারা নিযুক্ত হন।

ষষ্ঠত, সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে কেন্দ্র সরকার একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব একমাত্র কেন্দ্রীয় আইনসভাতেই উত্থাপন করা যায়। তাছাড়া, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দু'একটি বিষয় ছাড়া রাজ্য আইনসভার সম্মতিরও প্রয়োজন হয় না।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, ভারতে একটি অতিরিক্ত কেন্দ্র-প্রবণতাবিশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা রয়েছে। যেসব কারণবশতঃ অনেকে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলে স্বীকার করতে চান না, সেগুলি সকল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র মজুত করার কারণে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যে সামরিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তার অনিবার্য ফল হিসেবে প্রতিটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্রপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, প্রতিরক্ষা বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। তাছাড়া, বিশ্বায়নের ফলেও রাজ্যগুলির ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতাগণ সংবিধানের 1(1) ধারায় ভারতকে যে 'অঙ্গরাজ্যসমূহের সংঘ' বলে বৰ্ণনা করেছেন, তা আসলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র।
এই অধ্যায় থেকে অন্যান্য প্রশ্ন

এককেন্দ্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের পার্থক্য।
সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য।
রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য।