Features of Indian Constitution
What are the main features of the Constitution of India? WBCHSE class eleven Political Science notes in Bengali. Chapter- Constitution. Question- Features of Indian Constitution. Rastrabigyan Prashna Uttar.
রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর (একাদশ শ্রেণি)অধ্যায়- সংবিধান
প্রশ্ন- ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর। (8)
উত্তর- রাষ্ট্র একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিটি সংগঠন পরিচালনার জন্য যেমন নীতিনিয়ম থাকে, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যও তেমনি সুসংবদ্ধ নিয়মকানুন থাকে। এইসব নিয়মকানুনকে বলা হয় সংবিধান। ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালেই স্বাধীন ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনার কাজ শুরু করেছিল গণপরিষদ। 1950 সালের 26 শে জানুয়ারি সেই সংবিধান কার্যকর হয়। অনেকগুলি কারণেই ভারতের সংবিধান বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। নীচে ভারতের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরা হল।
1) বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান- ভারতীয় সংবিধান হল বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। ভারতের সংবিধানে বর্তমানে সাড়ে চারশোর বেশি ধারা, অসংখ্য উপধারা এবং 12 টি তফসিল রয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, মূল সংবিধানে 395 টি ধারা ছিল এবং এখনো শেষতম ধারা হল 395 নম্বর ধারা। কিন্তু কার্যত ভারতের সংবিধানে বর্তমানে প্রায় 460 টি ধারা রয়েছে।
2) জটিলতম সংবিধান- সংবিধান যত বৃহদায়তন হবে ততই জটিল হবে, একথা বলাই বাহুল্য। ভারতের সংবিধান বিশ্বের অন্যতম জটিল একটি সংবিধান। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, সরকারের প্রতিটি বিভাগের আন্তঃসম্পর্ক, নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্রপতি-রাজ্যপালদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রভৃতি বিষয়ে যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে।
3) মুখ্যত লিখিত সংবিধান- ভারতের সংবিধান মূলত লিখিত সংবিধান হলেও ভারতের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্রিটেনের মতোই বেশকিছু রীতিনীতি, প্রথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর অর্থ হল, কোনো বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ না থাকলে সেক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি বা শাসনতান্ত্রিক প্রথার আশ্রয় নেওয়া হয়।
4) সংবিধান সংশোধনের তিনরকম পদ্ধতি- সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিগত দিক থেকে ভারতের সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের মিশ্রন বলা চলে। আসলে, ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের তিনরকম পদ্ধতি রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের জন্য পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হলেই চলে; কিছু ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোট প্রদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হয় এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোট প্রদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন ছাড়াও অন্তত অর্ধেক রাজ্যের আইনসভার সমর্থন থাকলে তবে সংবিধান সংশোধন করা যায়।
5) প্রস্তাবনা সংযোজন- ভারতীয় সংবিধানের শুরুতেই রয়েছে একটি প্রস্তাবনা। প্রস্তাবনাটিকে মূল সংবিধানের ভূমিকা হিসেবে ধরা হয়। ভারতের সংবিধানে গৃহীত আদর্শসমূহ এই অংশে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
6) ব্রিটিশরাজের প্রভাব- ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশকে শাসন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে 'ভারত শাসন আইন' প্রণীত হয়েছিল। যেমন, ভারত শাসন আইন (1919), ভারত শাসন আইন (1935) ইত্যাদি। ভারতের সংবিধানে ভারত শাসন আইনের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।
7) অন্য দেশের সংবিধানের প্রভাব- গণপরিষদ যখন ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনার কাজ শুরু করে ততদিনে পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশেই নিজস্ব একটি করে সংবিধান ছিল। ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতাগণ সংবিধান রচনার সময় এইসব দেশের সংবিধান থেকে বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করেছিলেন। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে প্রস্তাবনা, ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের অনুকরণে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা ইত্যাদি।
8) মৌলিক কাঠামো অপরিবর্তনীয়- সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামো কোনোভাবেই সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান অনুযায়ী ভারত হল একটি "সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র" এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলিই সংবিধানের মূল কাঠামো।
9) সংবিধানের প্রাধান্য- ভারতের সংবিধানের প্রাধান্য সূচিত হয়েছে। এর অর্থ হল, সংবিধান হল দেশের সর্বোচ্চ আইন এবং সংবিধানবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না।
10) যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতি- সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও সংবিধানের কোথাও ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলে উল্লেখ করা নেই, শুধু 1(1) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, "India, that is Bharat, shall be a union of states".
11) সংসদীয় শাসনব্যবস্থা- গ্রেট ব্রিটেনের অনুকরণে ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় একজন নামসর্বস্ব শাসক থাকেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদের হাতে যাবতীয় শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকে।
12) মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি- সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ছয় প্রকার মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। অবশ্য মূল সংবিধানে মৌলিক অধিকারের সংখ্যা ছিল সাত। পরে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। সংবিধানের তৃতীয় অংশে (Part-iii) মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ রয়েছে।
13) মৌলিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্তি- ভারতের মূল সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যের উল্লেখ ছিল না। তবে, 1976 সালে 42 তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে 10টি মৌলিক কর্তব্য সংযোজিত হয়েছিল। বর্তমানে মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা এগারো।
14) ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত হয়নি- ভারতীয় সংবিধানে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি গৃহীত হয়নি। এর ফলে সরকারের তিনটি বিভাগ অর্থাৎ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়।
15) একনাগরিকত্ব- ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য এক নাগরিকত্বের নীতি প্রযুক্ত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এখানে দ্বিনাগরিকত্বের নীতি গৃহীত হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী ভারত রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাসকারী, অর্থাৎ, প্রতিটি অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সকল মানুষ ভারতের নাগরিক।
16) অখন্ড বিচারব্যবস্থা- সংবিধান অনুসারে, ভারতে একটি অখন্ড বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অখন্ড বিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিচারালয় হল হাইকোর্ট এবং হাইকোর্টের অধীনে রয়েছে বিভিন্ন অধস্তন আদালতগুলি।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও ভারতীয় সংবিধানের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে, ভারতীয় সংবিধানের বিশালতা এবং জটিলতা, এর লিখিত প্রকৃতি, সংশোধনের ক্ষেত্রে ত্রিবিধ পদ্ধতি, ভারত শাসন আইনের প্রতিফলন এবং অন্য দেশের সংবিধানের প্রভাব- এইকটি বৈশিষ্ট্যই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।