Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ

Types of Globalisation

বিশ্বায়নের প্রকারভেদ


দ্বাদশ শ্রেণি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
অধ্যায়- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক


[West Bengal Council of Higher Secondary Examination (WBCHSE) Class 12 Political Science Questions and Answers in Bengali; Chapter- International Relation; Question- Types of Globalisation.]


প্রশ্ন- বিশ্বায়নের সংজ্ঞা লেখো। বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ আলোচনা করো। [2+6]



উত্তর- ইংরেজি গ্লোবালাইজেশন (Globalisation) শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হল বিশ্বায়ন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি আধুনিক রাষ্ট্র বিশ্বায়নের দ্বারা প্রভাবিত। 'বিশ্বায়ন' শব্দটি এত ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় যে এর কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা নির্দেশ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন পন্ডিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।


'বিশ্বায়ন' ধারণাটির প্রবর্তক রবার্টসনের মতে, বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের সংকোচন এবং বিশ্বজোড়া পরস্পর নির্ভরশীলতার অবস্থাকে বোঝায়। আবার পিটার মার্কাস বলেছেন, বিশ্বায়ন হলো এক ধরনের পুঁজিবাদ তথা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী সম্পর্কের সম্প্রসারণ। জোসেফ স্টিগলিৎস্-এর মতে, বিশ্বায়ন হল প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিবিড় সংযোগসাধন যা সম্ভব হয়েছে প্রধানত দুটি কারণে- i) পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ব্যয় হ্রাস এবং ii) এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য, পরিষেবা প্রভৃতি আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বাধানিষেধের অবলুপ্তি। এইরকম আরো অনেক পন্ডিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। 


উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করে বলা যায়- বিশ্বায়ন হল এমন একটি বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া যা রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বের সকল রাষ্ট্র এবং জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবাধ আদান-প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে।


বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ


বিশ্বায়ন হল একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া যার প্রভাব রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই বিদ্যমান এবং এরা সকলেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে, অনেকেই এক একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেইসব আলোচনা থেকে বলা যায়, বিশ্বায়ন মূলত চার রকমের। সেগুলি হল-


1) অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন


বিশ্বায়নের ধারণাটি মূলত আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্বজুড়ে পণ্য এবং পুঁজির সঞ্চালন। বিশ্বায়নের ফলস্বরূপ সমগ্র বিশ্ব একটিমাত্র বৃহৎ বাজারে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতিসাধনের ফলে এক দেশের পণ্য অনায়াসে অন্য দেশে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া, আগে যে সকল আইনগত বাধানিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অসুবিধার সম্মুখীন হত বর্তমানে সেইসব বিধিনিষেধের বেড়াজাল অনেকটাই লোপ পেয়েছে। এর ফলে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি বাজার দখল করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এসবের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে বহুজাতিক সংস্থাগুলি (MNC) বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং ছোট ছোট বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।


2) রাজনৈতিক বিশ্বায়ন


বিশ্বায়নের ফলে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি। অর্থনীতি এবং রাজনীতি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের সূচনা হলেও তা ক্রমশ একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। এককথায় বললে, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন যাতে ফলপ্রসূ হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্রগুলির নীতিগত সামঞ্জস্য বিধানকেই বলা হয় রাজনৈতিক বিশ্বায়ন। বিশ্বায়নের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলির কাছে রাষ্ট্রগুলিকে কার্যত মাথা নত করতে হচ্ছে এবং একইসঙ্গে রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমিকতা অনেকাংশে লোপ পেতে বসেছে। এইভাবে, বিশ্বায়ন সর্বতোভাবে জাতিরাষ্ট্রের ধারণাকে সংকুচিত করে তুলেছে।


3) সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন


বিশ্বায়নের ধারণার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক লেনদেনের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এবং বিশেষত ইন্টারনেট ব্যবস্থার চরম উন্নতি ও বহুল ব্যবহারের ফলে সারা বিশ্বের মানুষ একে অপরের খুব কাছাকাছি আসতে পেরেছে। ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক গণমাধ্যমগুলির সৌজন্যে এক দেশের মানুষ আরেক দেশের মানুষের সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচিত হতে পারছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। একেই বলা হয় সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন।


4) সামাজিক বিশ্বায়ন


বিশ্বায়নের ফলে প্রচলিত সমাজব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামাজিক ক্ষেত্রে এক দেশের রীতিনীতি, আদর্শ অন্য দেশের জনগণ কর্তৃক গৃহীত হচ্ছে। এই বিষয়টিকে সামাজিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, আগে ভারতে অধিকাংশ পরিবার ছিল যৌথ পরিবার কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমী দেশগুলির অনুকরণে ভারতেও 'ছোটো পরিবার, সুখী পরিবার'- এর ধারণা বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।


পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়নের উপরোক্ত রূপগুলি ছাড়াও অনেকে কারিগরি বা প্রযুক্তিগত বিশ্বায়ন, পরিবেশগত বিশ্বায়ন প্রভৃতি কয়েকটি রূপের কথা বলে থাকেন। তবে, বিশ্বায়নের ধারণা মূলত অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর।