Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- গান্ধীজির সত্যাগ্রহ

Satyagraha

গান্ধীজির সত্যাগ্রহ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (দ্বাদশ শ্রেণি)

অধ্যায়- কয়েকটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শ


[West Bengal Council of Higher Secondary Examination (WBCHSE) Political Science Questions and Answers in Bengali; Chapter- Some Major Political Doctrines; Question- Concept of Gandhiji's Satyagraha.]


প্রশ্ন- গান্ধীজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি আলোচনা করো। [8]

উত্তর- গান্ধীজির রাজনৈতিক দর্শনের একটি বিশেষ দিক হল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি গান্ধীজির নিজস্ব উদ্ভাবন। সত্যাগ্রহ কথাটি দুটি শব্দের যোগফল, সেগুলি হল যথাক্রমে সত্য এবং আগ্রহ। বিশিষ্ট অর্থে সত্যাগ্রহ কথার অর্থ হল দৃঢ়ভাবে সত্যের পথ অবলম্বন (Holding firmly to truth)। একটি উন্নত জীবনদর্শন হিসেবে সত্যাগ্রহ নীতি সত্য, অহিংসা এবং আত্মনিগ্রহের কথা বলে। যারা সত্যাগ্রহে ব্রতী তাদের বলা হয় সত্যাগ্রহী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গান্ধীজি সত্যাগ্রহ নীতির বহুল প্রয়োগ করেছিলেন।

সত্যাগ্রহের প্রকৃতি

সত্যাগ্রহ একটিমাত্র নীতি নয়, বরং অনেকগুলি নীতির সমাহার। সত্যাগ্রহের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে হলে এর প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন।


1) নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয়- গান্ধীজি নিজেই প্রথমদিকে সত্যাগ্রহ এবং নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ সমার্থক বলে প্রচার করতেন। কিন্তু পরে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য টেনেছিলেন। তার মতে, উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের মধ্যে যতটা পার্থক্য রয়েছে, ততটাই পার্থক্য সত্যাগ্রহ এবং নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের মধ্যে। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ হল দুর্বলের অস্ত্র এবং নিজ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ হিংসাকেও সমর্থন করে। কিন্তু সত্যাগ্রহে হিংসার কোনো স্থান নেই। আবার, নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ প্রকৃত অর্থেই নিষ্ক্রিয়, কিন্তু সত্যাগ্রহীদের সক্রিয় হতে হয়।


2) অহিংসা ও সত্যাগ্রহ- সত্যাগ্রহ অহিংসা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। একজন সত্যাগ্রহী কোনো অবস্থাতেই হিংসার পথ অবলম্বন করেন না। সত্যাগ্রহী হবেন অহিংসার পূজারি। এমনকি, প্রতিপক্ষ যদি হিংসার পথ অবলম্বন করে থাকে, তবুও সত্যাগ্রহীকে হিংসার কথা মনে আনা চলবে না। গান্ধীজির মতে, অহিংসার দ্বারা হিংসাকে জয় করা সম্ভব। 


3) আত্মনিগ্রহ- একজন সত্যাগ্রহী ধৈর্য্য এবং সহানুভূতির সঙ্গে প্রতিপক্ষের ভুল সংশোধনের চেষ্টা করবে। কারণ, একজনের চোখে যেটা ঠিক সেটাই অন্যের চোখে ভুল মনে হতে পারে। এই ধৈর্য্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আত্মপীড়ন বা আত্মনিগ্রহের কথা। একজন সত্যাগ্রহী প্রতিপক্ষকে কষ্ট না দিয়ে আত্মপীড়নের মাধ্যমে সত্যধর্ম রক্ষা করবে। গান্ধীজির মতে, সত্যাগ্রহী যতই আত্মপীড়নের পথে অগ্রসর হবেন, ততই প্রতিপক্ষের হৃদয়ের দ্রুত পরিবর্তন করতে পারবেন।


4) নির্ভিকতা- সত্যাগ্রহে ভীরুতা এবং কাপুরুষতার কোনো স্থান নেই। সত্য রক্ষা এবং সত্যধর্ম পালনের জন্য সাহসের একান্ত প্রয়োজন। একজন সত্যাগ্রহী এমনকি তার বিরোধী পক্ষকে বিশ্বাস করতেও ভয় পাবেন না। সত্যাগ্রহের মূল নীতিতেও মানবচরিত্রে বিশ্বাস রাখার কথা বলা হয়েছে।


5) মহৎ জীবনদর্শন- সত্যাগ্রহ প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার একটি পদ্ধতিমাত্র নয়, এটি হল এক মহৎ জীবনদর্শন। গান্ধীজি কেবল নিপীড়িতদের নির্যাতন দূর করার জন্য সত্যাগ্রহ অবলম্বনের কথা বলেন নি, অন্যায়কারীর মনে ন্যায়বোধ জাগ্রত করাই ছিল তাঁর মতে সত্যাগ্রহের প্রধান উদ্দেশ্য।

সত্যাগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি

গান্ধীজির মতে সত্যাগ্রহ নানা ধরণের হতে পারে। যেমন- অসহযোগ, আইন অমান্য, অনশন, পিকেটিং প্রভৃতি। তবে সবক্ষেত্রেই সত্যাগ্রহীকে নির্দিষ্ট আচরণবিধি মেনে চলতে হত। যেমন- সত্যাগ্রহী কখনোই অন্যায় দাবি করতে পারবে না, তার ক্রোধ প্রকাশ করা চলবে না, প্রতিপক্ষের ক্রোধ তাকে সহ্য করতে হবে ইত্যাদি।

মূল্যায়ন

মহাত্মা গান্ধী একজন রাষ্ট্রদার্শনিক ছিলেন না। তা সত্বেও  রাজনৈতিক মতাদর্শের আলোচনায় তার সত্যাগ্রহ নীতি এখনো বহুচর্চিত একটি বিষয়। আবার, অনেকেই গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ নীতির বিরূপ সমালোচনা করেছেন। যেমন-


প্রথমত, সত্যাগ্রহের বাস্তবতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, সত্যাগ্রহ অতিমাত্রায় আদর্শপরায়ণ এবং বাস্তববিমুখ একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ। তাছাড়া, একজন সত্যাগ্রহীর যেসকল গুণাবলী থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলি আয়ত্ত করতে হলে দীর্ঘ সময় এবং সাধনার প্রয়োজন।


দ্বিতীয়ত, একজন সত্যাগ্রহীকে নিজে কষ্ট স্বীকার করে, এমনকি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে, প্রতিপক্ষের হৃদয় পরিবর্তন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন অন্যায়কারীর হৃদয় পরিবর্তন করার জন্য একজন নির্দোষ মানুষের মৃত্যুবরণ কতটা যুক্তিযুক্ত?


তৃতীয়ত, সত্যাগ্রহ নীতি পুরোপুরি আধ্যাত্মিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। গান্ধীজি বলেছেন, একজন সত্যাগ্রহী অবশ্যই ঈশ্বরে বিশ্বাস করবেন। সুতরাং ঈশ্বরের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের কাছে সত্যাগ্রহ মূল্যহীন।


চতুর্থত, অনেক সমালোচকের মতে, সত্যাগ্রহ নীতির সাফল্য নিয়ে গান্ধীজীর নিজেরই সন্দেহ ছিল। এইজন্য তিনি অনেকসময় আন্দোলন শুরু করে মাঝপথেই তা থামিয়ে দিয়েছেন।