Header Ads Widget

header ads

Ticker

6/recent/ticker-posts

দ্বাদশ শ্রেণি- হাইকোর্টের গঠন কার্যাবলি

রাষ্ট্রবিজ্ঞান (দ্বাদশ শ্রেণি)

অধ্যায়- ভারতের বিচারব্যবস্থা

[West Bengal Council of Higher Secondary Examination (WBCHSE) Class 12 Political Science Questions and Answers in Bengali; Chapter- Indian Judiciary; Question- Structure and Functions of High Courts.]


প্রশ্ন- ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো৷ [4+4]


উত্তর- ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র হলেও এখানে অখন্ড বিচারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। এই বিচারব্যবস্থার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের বিচার বিভাগের শীর্ষে রয়েছে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ। সংবিধানের 214 নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে। অবশ্য পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে [ধারা 231 (1)]। যেমন, কলকাতা হাইকোর্টের এক্তিয়ারের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

হাইকোর্টের গঠন

সংবিধানে বলা হয়েছে, একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য কয়েকজন বিচারপতি নিয়ে হাইকোর্ট গঠিত হবে। তবে, অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা কত হবে, সে বিষয়ে সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করেন। প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি এবং অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন।

হাইকোর্টের বিচারপতিদের যোগ্যতা

হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হতে হলে সেই ব্যক্তিকে (i) অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, (ii) ভারতের যেকোনো বিচারবিভাগীয় পদে অন্তত 10 বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা, অন্তত 10 বছর এক বা একাধিক হাইকোর্টে ওকালতি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে [ধারা 217 (2)]।

বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি এবং অপসারণ

সংবিধান অনুযায়ী, ভারতের রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন। তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন। অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করার সময় তিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল ছাড়াও ওই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এক রাজ্যের বিচারপতিকে অন্য হাইকোর্টে বদলি করতে পারেন।

হাইকোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স হল 62 বছর। প্রমাণিত অসদাচরণ কিংবা অসামর্থের অভিযোগের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতিকে পদচ্যুত করা যায়। অপসারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি উক্ত বিচারপতিকে অপসারণ করতে পারেন।

হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভারতের সংবিধানে হাইকোর্টের ক্ষমতা এবং কার্যাবলী সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, সংবিধান চালু হওয়ার আগে হাইকোর্টগুলি যে ক্ষমতা ভোগ করতো, এখনো সেইসব ক্ষমতাই ভোগ করবে। তবে, হাইকোর্টগুলি সংবিধান এবং উপযুক্ত আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সীমার মধ্যে থেকেই কার্য সম্পাদন করে থাকে। যাইহোক, হাইকোর্টের ক্ষমতা এবং কার্যাবলি এইরকম-

1) মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা- রাজস্ব সংক্রান্ত সব বিষয়ই হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতার মধ্যে পড়ে। এছাড়া, কলকাতা, মুম্বাই (বোম্বে) এবং চেন্নাই (মাদ্রাজ)  হাইকোর্টের ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলা মূল এলাকার মধ্যে পড়ে।

2) আপিল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা- হাইকোর্ট হল রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত। হাইকোর্টে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি উভয় প্রকার মামলার ক্ষেত্রেই নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। তবে এবিষয়ে কিছু সাংবিধানিক বিধিনিষেধ রয়েছে।

3) নির্দেশ, আদেশ, লেখজারি সংক্রান্ত ক্ষমতা- হাইকোর্টগুলি নিজ এলাকার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 226 (1) নম্বর ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট তার সীমানার মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য এইসকল আদেশ, নির্দেশ বা লেখ জারি করতে পারে- (i) বন্দী- প্রত্যক্ষীকরণ (ii) পরমাদেশ (iii) প্রতিষেধ (iv) অধিকার পৃচ্ছা এবং (v) উৎপ্রেষণ।

4) আইনের বৈধতা বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা- হাইকোর্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রণীত আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে।

5) তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতা- নিজ এলাকাভুক্ত সকল অধস্তন আদালতকে তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা হাইকোর্টের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। তবে হাইকোর্ট সামরিক আদালত এবং ট্রাইব্যুনালগুলিকে তত্ত্বাবধান করে না।


6) নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা- হাইকোর্ট তার অধস্তন আদালত গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জেলা জজ সহ অন্যান্য বিচারবিভাগীয় পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল হাইকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন।


7) মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা- কোনো অধস্তন আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলার সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন জড়িয়ে থাকলে, হাইকোর্ট সেই মামলাটিকে অধিগ্রহণ করতে পারে।


8) অভিলেখ আদালত হিসেবে ভূমিকা- সুপ্রিম কোর্টের মতো হাইকোর্টগুলি ও অভিলেখ আদালত (Court of records) হিসেবে কাজ করে থাকে।


9) অন্যান্য ক্ষমতা- (i) হাইকোর্ট অবমাননার জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করতে পারে, (ii) সুষ্ঠুভাবে বিচার কার্য সম্পাদনের জন্য নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে পারে।